Songs and musical hub
Title: | Je Agun Diye l যে আগুন দিয়ে |
---|---|
Singer: | Sayeeda Shampa |
Lyricist: | Golam Murshed |
Composition: | Sajib Das |
Music Arrangement: | Sajib Das |
Label: | Gaan Janala |
“যে আগুন দিয়ে” গানটি নিয়ে গানটির কন্ঠশিল্পী সাঈদা শম্পা এর কিছু কথা :
গত দেড় বছরে একটানা একক এবং দ্বৈত মিলে অনেকগুলো মৌলিক গান করার আমার সুযোগ হয়েছিলো। বিভিন্ন সুরকার গান গুলোতে সুর দিয়েছেন এবং সঙ্গীতায়োজন করেছেন।
ভাগ্যের বিষয় যে , সবগুলো গানই লিখেছেন দেশের একজন খ্যাতিমান গীতিকবি গোলাম মোর্শেদ।
“যে আগুন দিয়ে” গানটি আমার নতুন করে গান-যাত্রার প্রথম দিকের গান। সুরকার ছিলেন সজীব দাস। উস্লেখ্য যে, গীতিকবি মোর্শেদ ভাই নিজে সেই থেকে আজকের দিন পর্যন্ত একটা কথাই বলে এসেছেন , এই গানটি আমার গাওয়া সুন্দর গান গুলোর মধ্যে ১ নম্বরে জায়গা নিয়ে আছে। স্বাভাবিক কারণেই গানটা গাওয়ার পর থেকে তাই গানটিকে মাথায় নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি যার পর নাই যত্নে এবং আবেগে। গানটি শোনার পর শ্রোতারা এটাকে কোথায় জায়গা দিবেন , সেটা সময় বলে দিবে।
তবে…..সব কিছু ছাপিয়ে যে কারণে এই গানটি আমার বুকের খুব ভিতরে থেকে যাবে সারাটা জীবন, থেকে যাবে একটা বড়ো কান্না নিয়ে , একটা পাহাড়সম না সইতে পারা বেদনার ভার নিয়ে….মানুষের কাছে গানটি যাওয়ার সময়টাতে সবার কাছ থেকে সেকথা আর আড়াল করতে ইচ্ছে হোলো না :
বাবা-মায়ের সংসারে আমরা ভাই বোনরা মিলে মোট ৪ জন। প্রথমেই বোন। আমি ২ নাম্বারে। বাকি দুজন ভাই তার মধ্যে সবচেয়ে ছোট ভাই, অর্থাৎ আমাদের ভাই বোনদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট যে, নাম জাকারিয়া। আমার চেয়ে বয়সে ১৩ বছরের ছোট।কানাডায় পেট্রোক্যামিকাল ইন্জিনিয়ারিং -এ পড়া শেষ করে ঢাকায় আই ইউ বি থেকে মাষ্টারস শেষ করে বিয়ে করেছে এবং চাকরী করছিলো ঢাকায়। বয়সের বেশী ফারাকের কারণে তাকে আমি সন্তানের মতোই দেখতাম।
বরাবরই ও কেমন যেন অসহ্য রকমের চুপচাপ , নির্লিপ্ত , পার্থিব চাহিদাবিহীন । কারো প্রতি অভিমান , অভিযোগ, অনুযোগ দেখানোর মতো গল্প তাকে নিয়ে করার নেই।
জাকারিয়ার কি পছন্দ , কি ছিলো অপছন্দের , কেউ কখনো জানতে পারেনি। এতোটা বছর আমি গান গাইছি , আমার গাওয়া অন্ততঃ একটি গানও সে শুনেছে কিনা , বলতে পারবো না।
তারপর হঠাৎ করে একদিন একটা অন্যরকম ঘটনা ঘটলো। বছর খানেক আগের ঘটনা। “যে আগুন দিয়ে” গানটি সবে রেকর্ডিং শেষ করেছি। কবে বাজারে আসবে , তাও মাথায় নেই। কিন্তু মা এবং বড়ো বোনকে পাঠিয়ে দিলাম তখ্খনি , গানটি শোনার জন্য। তিন চারদিন পর হঠাৎ ঢাকা থেকে আমেরিকায় আমার কাছে একটা ফোন কল আসলো । অপর প্রান্ত থেকে আম্মা বলছে, শোন, তোর গাওয়া “যে আগুন দিয়ে” গানটা জাকারিয়ার খুব ভাল লেগেছে। প্রথমে বুঝতে পারিনি আম্মা কি বলছে। বোঝার পর আমিতো অবাক । এটা কি আমার ভাই জাকারিয়া ! ও আমার গান শোনে ? সব গান থেকে সব চেয়ে পছন্দের গান তার কাছে কোনটি, সেটিও আম্মাকে জানানোর ইচ্ছে হোলো ? এরকম অবাক করা বিষয়টি দু’চারদিন পরই মাথা থেকে অবশ্য সরে গেলো।
তারপর আবার হঠাৎ করে আরও একটা অন্যরকম ঘটনা ঘটলো। পাঁচ মাস আগে , তারিখটা ২০ শে ডিসেম্বর ২০২২, মঙ্গলবার । আমরা সবাই যে যার মতো ব্যস্ত। সেদিন কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে খুব নিশ্চুপে, সেদিনের গাঢ় সন্ধ্যায় পায়ে পায়ে হেঁটে হেঁটে পৃথিবীর সীমানা পেরিয়ে গেলো সে । পৃথিবীতে আর সেদিন থেকে থাকলো না জাকারিয়া ।
ঘটনাটি ঘটে যাওয়ার পর সাথে সাথে বাবা মা সহ আমরা কেউ যেন সত্যিটার কিছুই টের পেলাম না। বেশ ক’টা দিন যাওয়ার পর এখন যেন মনে হচ্ছে , সেদিন এই গোটা এই পরিবারের সবার পুরোটা বুক কয়েকটা নিঁখুত টানে কেটে দিয়ে চলে গিয়েছিলো এক অদৃশ্য ব্লেড। একটু সময়ের পর দেখা গেলো , কাটা জায়গা গুলো দিয়ে রক্ত বেরুচ্ছে।
হ্যাঁ , আমাদের পরিবারের সবার হৃদয় ফালি ফালি করে কেটে দিয়ে চলে গেলো এক নিপুণ ব্লেড। পাঁচ মাস হ’য়ে গেলো , রক্তক্ষরণ বাড়ছেই শুধু , একটুও থামে নি।
আমার মায়ের , আমার বাবার কান্না থামছে না। আমাদের কারো চোখের জল মুছে যাচ্ছে না।আর এই ব্যক্তিগত আমার , কাজের ফাঁকে ফাঁকে মনে হচ্ছে, কেন জাকারিয়ার “ যে আগুন দিয়ে” গানটি এতো পছন্দের ছিলো…? এ পৃথিবীতে তার আসা ছিলো কি , আগুনের সাথে সখ্যতা করার জন্য…?
এই পৃথিবীর বাস্তবতায় , জাকারিয়া এখন কেবলই একটা মিহিদানা মাটির কবর।তবু
শেষের কথা : “যে আগুন দিয়ে” বের হলে , গানটা ক’জন শুনবেন জানি না। তবে গানটা যখনই ইথারে ভেসে ভেসে আমার মায়ের এবং আমাদের পরিবারের আর সকলের কানে পৌঁছাবে, তখনই মনে হবে এই গান আমাদের সারাজীবনের কান্না, আমাদের সইতে না পারা বেদনা।
আমাদের চোখের পদ্মপাতায় টলোমলো অশ্রুরা ক্ষণে ক্ষণে জাকারিয়াকে নিশ্চিত করে জানাবে :
জাকারিয়া….
তোমাকে আগুন আর কখনো দেখবে না
তোমাকে বৃষ্টিরা আর কখনো দেখবে না