Story Behind The Song

“সন্ধ‍্য‍ার রঙে” গানটি নিয়ে গানটির গীতিকবি গোলাম মোর্শেদের কিছু কথাঃ

‘সন্ধ‍্যার রঙে’ গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছে  কণ্ঠশিল্পী “মৈত্রী রায় দাদারকার” ।
সুর করেছে ‘বাসুদেব ঘোষ’ এবং  সংগীতায়োজনেও ছিলেন তিনি নিজে।
গানের সংসারে জীবন যাপন কালে কখনো কখনো , আলাদা রকমের অভিজ্ঞতা হয় বৈকি। এই গানটি তৈরীর পেছনের গল্পটা সেরকম। প্রায় ৬ বছর আগের কথা। প্রায়ই এমন হোতো যে, বাসুদেব ঘোষ  সুর করার জন্য আমার কাছ থেকে বেছে বেছে অগ্রিম কয়েকটা লিরিক নিয়ে নিজের কাছে  রাখতেন। বলতেন, লিরিকগুলো হাতে থাকলে যখনই উপযুক্ত সুর মাথায় আসবে, সেটা করে ফেলবো। সেভাবেই “সন্ধ‍্যার রঙে” গানটির সুর সৃষ্টি হয়েছিলো। সুরটি করার পরদিন সকালে ফোন করে আমাকে বিকেলে একবার আসতে বললেন বাসুদেব। কথামতো বিকেলে গেলাম ওনার বাসায়। দেরী না করে গানটি শোনালেন আমাকে। শোনার পর চুপ করে রইলাম। মনে মনে ভাবলাম, এর নামই বাসুদেব । আমার নিশ্চুপ ভাবনার মাঝে ঢুকে উনি বললেন, এই গান নিয়ে আমার ভিন্ন ভাবনা আছে, আপনি পরে জানতে পারবেন। আমি কিছু না বলে , হাল্কা গল্প করে ওনার কাছ থেকে বিদায় নিলাম।

এর মাস তিনেক পরের ঘটনা। বাসুদেব মাত্র ভারত থেকে ফিরেছেন। একদিন দুপুরে ফোন করে বললেন, দাদা সন্ধ‍্যার দিকে অবশ‍্যই একবার আসবে। কিছু টা কৌতূহল নিয়ে গেলাম ওনার কাছে। আসা মাত্র উনি ওনার মিউজিক সিস্টেম অন করে বললেন, ইচ্ছে ছিলো আপনাকে মিষ্টি সারপ্রাইজ দিবো, দাদা শুনুন গানটা। আমি চুপ করে শুনলাম গানটি স্রেফ মুগ্ধতা নিয়ে। কোনো হদিস করতে পারলাম না, কার কন্ঠ এটি। 
তখন তিনি জানালেন, ওনার নাম “মৈত্রী রায় দাদারকার”। ভারতের রাগাশ্রয়ী গানের একজন উঁচু মানের কন্ঠশিল্পী।ওনার স্বামী পন্ডিত দাদারকার একজন বড়ো সঙ্গীতজ্ঞ। এবার ভারতে গিয়ে এই গানটি মৈত্রী দি এর কন্ঠে গাইয়ে নিয়ে এসেছি। গল্পটা বেশীর ভাগ অংশ এখানেই শেষ।
এই অংশের শেষে তার রেশ হুট করে কাটলো না। ভাবনা পায়চারী করছে এদিক ওদিক আর মনে হচ্ছে , একটা  সুরেলা গলায় কি পরিমান সাধনা থাকলে, এতো নিখুঁত ভাবে এমন গান ফুটিয়ে তোলা যায় ! এর চেয়ে বাড়তি কিছু বলার নেই, শিল্পী সম্পর্কে ।

গল্পের শেষ অংশ :
আমাদের ‘গান জানালা’ মিউজিক চ‍্যানেল বাজারে আসার অনেক অনেক আগের এই গল্প। একদিন বাসুদেব আমাকে জানালেন, ‘সন্ধ‍্যার রঙে’  গানটি খুব তাড়াতাড়ি বাজারে আনতে হবে। আর দেরী  করা ঠিক নয়। বললাম, ঠিক আছে।
 সবই ঠিক আছে এবং ঠিক ছিলো। কিন্তু এরই মাঝে সবচাইতে বড়ো বেঠিক কাজ অর্থাৎ একটি বেঠিক ঘটনা ঘটে গেলো। একদিন হঠাৎ করে, কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে একদিনেরও নোটিশ না দিয়ে, প্রিয় বাসুদেব ঘোষ নিজেই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন !  
যেন গালে হাত দিয়ে, হতবাক হয়ে, বুকের মধ‍্যে ক্ষত নিয়ে কয়েক বছর পার হয়ে গেলো।
তারপরও তো এই পৃথিবীর কোন কিছু থেমে থাকলো না। সময়ের চাকা ঘুরতে থাকলো তার সহজাত ভঙ্গিতে ।
এর মধ‍্যে “গান জানালা” এর জন্ম হোলো । তার বয়সও এর মধ‍্যে আড়াই বছর গড়ালো । বাস্তবতায় থিতু হয়ে গান জানালার আমরা ঠিক করলাম, “সন্ধ‍্যার রঙে” গানটি আমাদের চ‍্যানেলে অবমুক্ত করবো। কাজ এগিয়ে নেয়ার সময় থেমে যেতে হোলো একটা কারণে। এই গানের আসল মানুষ, এর কন্ঠশিল্পীর সাথে আমার পরিচয় হয়নি  সরাসরি।চেষ্টা করেও পরিচিত হওয়ার কোনো সূত্র খুঁজে পাওয়া গেলো না। অবশেষে ‘গুগল সাহেবের’ সাহায্য নিয়ে ওনার সম্পর্কে জানলাম এবং শিল্পীর ছবি যোগাড় করলাম।
পেছনে আশ্চর্য গল্প বহন করা এই গান, অবশেষে আজ ১৩ ই ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে, সন্ধ‍্যা ৬ টায় অবমুক্ত হচ্ছে, গান জানালার ব্যানারে।
জানি শ্রোতারা আগ্রহ নিয়ে গানটি শুনবেন এবং মনের খোরাক মিটাবেন যারপরনাই সন্তুষ্টিতে ।
কিন্তু এই মুহূর্ত পর্যন্ত জানি না, এই গানের কন্ঠশিল্পী মৈত্রী রায় দাদারকার নিজে কবে কখন জানবেন অথবা আদৌ জানবেন কিনা , আজ তাঁর গাওয়া এই গানটি মানুষের কাছে আসছে, গান জানালা এর YouTube Channel এবং Facebook page এর মাধ্যমে।
গানটির পেছনের মূল নায়ক বাসুদেবের কথা আর আবার নাইবা তুলে ধরলাম। ।
এই পৃথিবী কি অবাক করা জায়গা, তাই না….???