guitar
a

Music Details

Songs and musical hub

Credit Line
Title: Mala Gathar Kotha l মালা গাঁথার কথা
Singer: Haimanti Sukla
Lyricist: Golam Murshed
Composition: Basudeb Ghose
Music Arrangement: Basudeb Ghose
Video Edit & Color: Ashik Rahman
Artwork: Risad
Label: Gaan Janala
Story Behind The Song

হৈমন্তী শুক্লা এর কন্ঠে  “মালা গাঁথার কথা” গানটি নিয়ে গানটির গীতিকবি গোলাম মোর্শেদের কিছু কথাঃ

হৈমন্তী দি কোনো গানে কণ্ঠ দিবেন এবং তাও আবার আমার লিখায়,  স্বাভাবিক ভাবেই সেটা অপার আনন্দের বিষয়।

কিন্তু দিদি গানটিতে কণ্ঠ দেয়ার পর যখন এর পেছনের গল্পটা  জানতে পারলাম, তখন আমার মনের যে চরম বেহাল অবস্থা হয়েছিলো, তার উদাহরণ অন্য কোথায়ও মিলবে কি না, সেটা আমার জানা নেই।
একই ঘটনায় আনন্দে আপ্লুত হওয়া এবং একই সাথে বেদনায় আক্রান্ত হয়ে যাবার গোলমেলে অবস্থার চেহারাটা হচ্ছে এরকম :

বছর ছয় সাতেক আগের কথা। এই গানের সুরকার আমার কাছের মানুষ বাসুদেব ঘোষ এবং আমি সপ্তাহে অন্ততঃ একবার বসতাম নিয়ম করে, গান তৈরীর কাজে। আমার লিখা এবং ওনার  সুরে গান। গানগুলোতে কণ্ঠ দিচ্ছে আমাদের দেশের গুণী কণ্ঠ শিল্পীরা। এর মধ্যে কিছু কিছু গান তুলে রাখা হচ্ছে, যখনই বাসুদেব কলকাতা যাবেন, তখন ওপার বাংলার গুণী শিল্পীদের কণ্ঠে গানগুলো গাইয়ে নিয়ে আসবেন। তুলে রাখা গানের তালিকার মধ্যে আমার লিখা গানও থাকতো বাসুদেবের সংগ্রহে।

সেবার আবার বাসুদেবের কলকাতা যাবার পালা। আট দশটা গানের মধ্যে আমার লিখা চারটা গানও উনি ওনার থলিতে ভরলেন।বাসুদেবের  নিজস্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ঠিক হলো , ১ টি গান গাইবে শিল্পী মৈত্রী বসু দাদারকার, ২ টি  সুদেষ্ণা গাঙ্গুলি আর ১ টি গাইবেন সেই স্বপ্নের মানুষ “হৈমন্তী শুক্লা”। আমি যার পর নাই  আবেগে আপ্লুত, বিশেষ করে আমার চার গানের মধ্যে একটিতে কণ্ঠ দিবেন হৈমন্তী দি। বাসুদেব চলে গেলেন ভারতে। ব্যক্তিগত কাজ ছাড়াও গানের কাজ শেষ করে ফিরে আসলেন দেশে। আসার পর পরই আমরা বসলাম এক সাথে ওনার স্টুডিওতে। প্রথমে মৈত্রী বসু এবং সুদেশনার গানগুলো শুনলাম। মন ভরে গেলো।  তারপর হৈমন্তীদি এর গান। কিন্তু কপালে লিখন এমন…..গানের প্রথম লাইন শুনেই আমার মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা !

শুনে দেখি , এটা তো অন্য গান…! আমার লিখা এবং বাসুদেবের সুর করা বাছাইকৃত যে গানটি হৈমন্তীদি কে দেয়ার কথা, সেটা এটা নয়। অবাক বিস্ময়ে আমি বাসুদেব কে বললাম ব্যাপারটা কি ?
লজ্জিত চেহারা নিয়ে উনি বললেন, দিদি যেদিন ষ্টুডিও-তে  গেলেন গানটিতে কণ্ঠ দেয়ার জন্য, সেখানে গিয়ে বাসুদেব টের পেলেন, গানটির লিরিক এবং সুর কোনোটাই ওনার কাছে নেই !  অনেক খোঁজাখুজির পরও যখন গানটা উদ্ধার করা গেলো না, তখন এর কোনো বিকল্প ব্যবস্থা করা যায় কিনা , প্রাণপণে সেটা দেখতে লাগলেন। সেই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে উনি ওনার হাতের ব্যাগ থেকে সব কাগজ বের করলেন এবং আমার হাতের লিখা একটি চিরকুট আবিষ্কার করলেন। সেটার ভিত্তিতেই তিনি তড়িৎ সিদ্ধান্ত নিলেন এবং এর উপর তখনই সুর করে হৈমন্তীদির হাতে ধরিয়ে দিলেন। বেচারী দিদি কিছুই টের পেলেন না এবং গানটি গেয়ে ফেললেন। এটা আমার লিখা গান, সম্ভবতঃ সেটা পরিষ্কার রাখার জন্য , বাসুদেব খেয়াল করে চিরকুটটি বয়ে নিয়ে এসেছিলেন । যথাবিহিত সেটা আমার হাতে তুলে দিলেন। আগ্রহ নিয়ে আমি চোখ বুলিয়ে দেখি, হাতের লিখা ঠিকই আমার। পড়ে দেখলাম, সেটা আমার কোনো গানের লিরিক অবশ্যই নয়,  সেখানে কিছু এলোমেলো কথা বিক্ষিপ্ত ভাবে লিখা ছিলো । অনেক চিন্তা করে বের করেছি, হয়তো বা কোন এক মুহুর্তে কিছু কথা মনে আসতেই আমি সেটা টুকে রেখে দিয়েছিলাম, সামনে এর উপর ভিত্তি করে কোনো একটা লিরিক সাজিয়ে ফেলবো। এটা আমি দু’চারবার আগেও করেছি।  এরকম ক্ষেত্রে যখন গানটি লিখা শেষ হয়, বেশীরভাগ সময়ই দেখা যায়, সেই টুকে রাখা চিরকুট থেকে হয়তো একটা লাইন মাত্র ব্যবহার করেছি। অথচ বাসুদেব চিরকুটে এলোমেলো ভাবে লিখা কথাগুলোকে জোড়া-তালি দিয়ে একটি গান বানিয়ে দিদি কে দিয়ে গাইয়ে ফেললেন। আমি কেমন লিখি , সেই বিচারে না গিয়ে অন্ততঃ বিনয়ের সাথে এটা বলতে পারি, অনেকাংশে সামঞ্জস্যহীন কথা দিয়ে তৈরী এই গানের মতো কোনো লিরিকই আমি কোন শিল্পীর জন্য লিখি নি। আর এমন একটি এলোমেলো কথার উপরে একটি গান তৈরী হয়েছে এবং সেটাতে কণ্ঠ দিয়েছেন হৈমন্তী শুক্লার মতো প্রবাদপ্রতিম শিল্পী ! আমার মাথা ঠিক করতে আমার অনেক সময় লেগেছিলো, সেটা এখনও মনে পড়ে।

শেষের কথা, কোনো আনন্দ কোনো বেদনা চিরদিন একরকম ভার বহন করে না, একই রঙ ধরে রাখে না। অনেক গুলো বছর পর আজকের এই সময়টাতে ঐ ঘটনাটি আমার কাছে ভিন্ন বিশেষণে ভিন্ন মাত্রায় জীবন্ত হয়ে আছে :
হৈমন্তী দি এর বয়স বেড়েছে। উনি এখন আর নতুন কোনো গান রেকর্ড করার জন্য ষ্টুডিও তে যান কিনা আমি জানি না।

বাসুদেব এখন আমাদের মাঝে নেই। ষ্টুডিওতে গান রেকর্ড করার সময় গানের সুর এবং কথা খুঁজে না পাওয়ার বিড়ম্বনায় বাসুদেবকে আর কখনো পড়তে হবে না !
সাথে এটাও মস্ত বড় সত্যি, বাসুদেব এর কাছে আমার “এই ঋণ” এক জীবনে আর শোধ হবে না : ওনার কারণেই শিল্পী হৈমন্তী শুক্লা আমার লিরিকে একটা গান গেয়েছিলেন। কি সৌভাগ্য আমার !

“মালা গাঁথার কথা” শিরোনামের এই গানটি আজ ২৬ শে সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে সন্ধ্যা ৬ টায় ‘গান জানালা’ এর YouTube Channel এবং Facebook Page-এ অবমুক্ত হচ্ছে।

শ্রোতাদের জন্য রইলো অফুরান ভালবাসা এবং শুভেচ্ছা ।

Lyric

মালা গাঁথার কথা
বলবো না তোমায়
চিঠি তো আর লিখবো না
তুমি শুধু এই শহরে থেকো
পাথরের মন ছুঁয়ে তুমি গেছো হারিয়ে
আমি দেবো বৃষ্টি
থাকবো নদী হয়ে
তোমার বেদনার সাথী আমিও
তুমি শুধু এই শহরে থেকো ।

 সুখেরই পথ ভুলে তুমি ব্যথা বাড়ালে
 আমি দেবো সুখেরই স্বপ্ন এনে ঘরে
 তোমার বেদনার সাথী আমিও
 তুমি শুধু এই শহরে থেকো ।